গোমতী প্রতিদিন ডেক্স :
এক কন্যা উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা অপর কন্যা এমবিবিস ডাক্তার, দুজন কন্যার গর্বিত পিতা জনপ্রিয় অভিনেতা দিলদার (দিলদার হোসেন) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জানুয়ারী, চাঁদপুরে জেলার শাহতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি এসএসসি পাস করার পর, আর লেখা-পড়া করেননি। চাকরি করতেন হোটেল পূর্বাণীতে, এখানেই দেখা হয় আরেক গুণি অভিনেতা অমল বোস-এর সাথে, আর অমল বোসই তাকে নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে।
দিলদার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র, অমল বোস পরিচালিত কেন এমন হয় মুক্তিপায় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে। তিনি আরো যেসব ছবিতে অভিনয় করেন- দুস্য বনহুর, শাহজাদা, অংশীদার, টক্কর, গাঁয়ের ছেলে, ওমর শরীফ, কোরবানি, সোনার তরী, নবাবজাদী, সুখের সংসার, জনতা এক্সপ্রেস, নাগ নাগিনী, নাগপুর্নিমা, সি আই ডি, বিদ্রোহী, মহানায়ক, তাসের ঘর, অস্বীকার, লড়াকু, ওগো বিদেশিনী, যন্ত্রণা, ভেজাচোখ, বেদের মেয়ে জোসনা, আপন দুলাল, মৃত্যুর মুখে, বিক্ষোভ, অন্তরে অন্তরে, দাঙ্গা, পাগল মন, নয়ালায়লা নয়ামজনু, দোলনা, কন্যাদান, চাওয়া থেকে পাওয়া, সুন্দর আলী, জীবন সংসার, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, শান্ত কেন মাস্তান, গাড়িয়াল ভাই, মনে পরে তোমাকে, বীর সৈনিক, কুখ্যাত খুনী, কুলি, ডন, অচিন দেশের রাজকুমার, প্রেম যমুনা, নীল সাগরের তীরে, বাঁশিওয়ালা, আব্দুল্লাহ, বীর পুরুষ, নিষ্ঠুর, দূর্জয়, স্বপ্নের পৃথিবী, এই ঘর এই সংসার, তেজী, প্রিয়জন, বিচার হবে, কালুগুন্ডা, শুধু তুমি, স্বপ্নের নায়ক, আনন্দ অশ্রু, শান্ত কেন মাস্তান, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, তুমি কি সেই, বিষেভরা নাগিন, নাচনেওয়ালী, খাইরুন সুন্দরী, প্রিয়জন, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, তুমি শুধু আমারসহ অসংখ্য ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন।
দিলদার শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে, তুমি শুধু আমার ছবিতে অভিনয়ের জন্য।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সেরা কৌতুক অভিনেতাদের অন্যতম একজন ছিলেন, দিলদার। নিখুত অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমা পর্দায় সবচেয়ে বেশি হাস্যরস ফুটিয়ে তোলায় পারদর্শি অভিনেতা ছিলেন তিনি। একসময়ে কৌতুক অভিনয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান নেন তিনি। দর্শকদের অতিপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে, বক্সঅফিসে নিজের চাহিদাকে স্টার পর্যায়ে উন্নিত করতে সক্ষম হন। হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌতুক অভিনেতা। এমন একসময় গেছে যে, কোনো কোনো ছবির স্ক্রিপ্ট শুধু তার জন্য আলাদা ভাবে লেখা হত।
দর্শকদের চাহিদার কথা চিন্তা করে চিত্রপরিচালকরা বেশিরভাগ সিনেমায় চাইতেন, দিলদারকে। এমনও সময় গেছে বছরে তাঁর ৪০/৪২ টি ছবি মুক্তি পেয়েছে। দর্শক জনপ্রিয়তা এতোটাই আকাশচুম্বী হয়ে ওঠেছিল যে, কিছু কিছু ছবি শুধুমাত্র তাঁর জন্যই ব্যবসায়ীকভাবে উৎরে যেত।
কৌতুক অভিনয়ে জনপ্রিয়তার সকল রেকর্ড ভঙ্গ করা দিলদারকে নায়ক করেই নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি ছবি। তাঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন নূতন। ছবির পরিচালক ছিলেন প্রয়াত তোজাম্মেল হক বকুল। ‘আব্দুল্লাহ’ ছবিটি যেমন জনপ্রিয়তা পায়, তেমনি ব্যবসায়ীকভাবেও সফল হয়।
বাংলাদেশের সিনেমাপর্দা হাসির বন্যায় ভাসিয়ে, কৌতুক অভিনয়কে সমৃদ্ধ করেছেন যিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে অনন্য অবদান রেখেগেছেন যিনি। সেই অসম্ভব জনপ্রিয় অভিনেতাকে/ আনন্দময় মানুষটিকে, অনন্ত অভিবাদন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে চিরঅম্লান, কিংবদন্তিতুল্য কৌতুক অভিনেতা দিলদার।।।
(Collected)