নিজস্ব প্রতিবেদক :
চট্টগ্রামে যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামী মোঃ রাশেদকে (৩০) গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড আসাদগঞ্জ উপ শাখার সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত রাশেদ চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন গ্রামের মৃত হাফেজ আহম্মদের ছেলে।
গত ১০ জুলাই মোঃ রাশেদ এর স্ত্রী নিপা আক্তার তার বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর আদালতে জেলা লিগ্যাল এইড চট্টগ্রামের সহযোগিতায় মামলার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত মামলা রেকর্ড (নথিভুক্ত) করে বিষয়টি তদন্তের জন্য বাকলিয়া থানাকে নির্দেশ দেন। পরদিন বাকলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি রেকর্ড হয় এবং একই দিন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মোঃ রাশেদ ২০২১ সালে নিপা আক্তারকে বিয়ে করেন এবং এ পরিবারে তাদের একটি পূত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সাময়িক সুখে থাকলেও কিছুদিন পরই যৌতুকের দাবিতে শুরু হয় স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল অভিযুক্ত রাশেদ তার স্ত্রী নিপার আক্তারের নিকট ৫০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন দাবি করে। মোবাইল ফোন কিনে দিলেও টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কাউকে না জানিয়ে শরীয়তপুর থেকে চট্টগ্রাম চলে আসে রাশেদ। এর পর থেকে তালাক নোটিশ পাঠায়, যৌতুক নিয়ে নোটিশ প্রত্যাহার করে। আবার নোটিশ পাঠায়, আবার প্রত্যাহার করে। নোটিশ-প্রত্যাহার, নোটিশ-প্রত্যাহারের ট্রেন চলতে থাকলে হয়রানির চির মুক্তির জন্য ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করতে বাধ্য হন স্ত্রী নিপা আক্তার। তার স্ত্রী যেকোন শর্তে সংসার করতে আগ্রহী হওয়ায় পাঁচ লাখ টাকার দেনমোহর না পেয়েও পেয়েছে মর্মে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন স্বামীর বন্ধু এডভোকেট মনির (ভিডিও/অডিও ক্লিপ রয়েছে)। পরে তিনিই আবার এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে নতুন কাবিননামা তৈরি করে বিয়ে করান। কয়েক মাস পর দেওয়া হয় পুনরায় তালাক। জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে শিশুর ভরণপোষণের জন্য আবেদন করলে লিগ্যাল এইড অফিসার প্রতিমাসের জন্য ৫০০০ টাকা ধার্য করে দেন। যা প্রতিবছর ১০% হারে বৃদ্ধি পাবে। এক শিশুর ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে এ টাকা দিতে পারলে সংসারই করা যায় উল্লেখ করে রাশেদ পুনরায় ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ ১২ লক্ষ টাকা মোহরানা ধার্য্যে আরেকটি কাবিননামা সম্পাদনা করেন তার বন্ধু মনিরকে দিয়ে এবং বাসা ভাড়া নিয়ে নগরীর কালামিয়া বাজার দু’তলা মসজিদের পাশে আব্দুল খালেকের বাড়িতে একসাথে থাকতে শুরু করে। ৭ মে আবারো ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন রাশেদ। যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে মারধর করে ঘুমন্ত স্ত্রীর স্বর্ণালংকার নিয়ে বের হয়ে যান তিনি। এ বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করতে গেলে থানা আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। পরে এই নারী বাধ্য হয়ে আদালতে যান।
জানা যায়, রাশেদ তার বন্ধু মনিরের সহযোগিতায় কাবিন সম্পাদনা করে উল্টো তিনি নিজেই কাবিন জালিয়াতির মামলা করেন।
বাদীনি নিপা আক্তার বলেন, আমি যতবারই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি, বিপরীতে তিনি আমাকে হয়রানি করেছেন। আমার বাপের সম্পত্তি বিক্রি করে পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করেছেন।
জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী আহমদ কবির (করিম) বলেন, চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড অফিস আমাকে বাদীনি নিপা আক্তারের পক্ষে প্যানেল আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ এর আদালতে আসামী মোঃ রাশেদ এর বিরুদ্ধে বিচারের প্রার্থনায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। নালিশী দরখাস্ত পর্যালোচনায় ও অভিযোগকারী পরীক্ষা করে অভিযোগের বক্তব্য সন্তোষ জনক হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ এর বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ওসমান গনি অভিযোগটি এজাহার হিসাবে রেকর্ড করে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন জমা দিতে বাকলিয়া থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। এই নির্দেশের জন্য আমি বিজ্ঞ বিচারক মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে যারা যৌতুক লোভী তারা সতর্ক হবে বলে আশা করি।
বাকলিয়া থানার কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার বলেন, আসামী রাশেদকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।